সূরা আল-ফাতিহা

 


সূরা ফাতিহার ক্যালিওগ্রাফি


 سورة الفاتحة (সূরা আল-ফাতিহা)


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ


الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ

غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ



বাংলা অনুবাদ (তরজমা)


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

বিচার দিনের মালিক।

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য চাই।

আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো—

তাদের পথে যাদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছ,

তাদের পথে নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল ।হয়েছে।

 


সূরা আল-ফাতিহা – বিস্তারিত তাফসীর


সূরা ফাতিহা: কুরআনের প্রথম সূরা

আয়াত সংখ্যা: ৭

অর্থ: সূচনা / প্রারম্ভ

মাক্কী সূরা


 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ


অর্থ: “শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।”


তাফসীর:

এই আয়াত প্রতিটি কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার শিক্ষা দেয়।


“بِسْمِ اللَّهِ” অর্থ, “আল্লাহর সাহায্য ও বরকত চেয়ে আমি কাজ শুরু করছি।”


“الرَّحْمَٰنِ” (আর-রহমান): যিনি দুনিয়ার সকল সৃষ্টির প্রতি দয়ালু।


“الرَّحِيمِ” (আর-রহিম): যিনি আখিরাতে মুমিনদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করবেন।


এই দুই গুণে আল্লাহর দয়া সর্বব্যাপী ও চিরস্থায়ী — এতে ভয় ও আশা দুটোই শেখানো হয়েছে।



الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ


অর্থ: “সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।”


তাফসীর:

“আলহামদু লিল্লাহ” মানে — সম্পূর্ণ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা কেবল আল্লাহর প্রাপ্য।


“রব্বুল আলামিন” অর্থ, আল্লাহ সকল জগতের মালিক, স্রষ্টা, ও প্রতিপালক।


তিনি মানুষ, ফেরেশতা, প্রাণী, জিন—সবকিছুকে রিজিক দেন ও পরিচালনা করেন।


এ আয়াত মানুষকে শেখায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ও অহংকার ত্যাগ করতে।




الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


অর্থ: “যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।”


তাফসীর:

আল্লাহ তাঁর দয়ায় সবকিছু আচ্ছন্ন করেছেন—


“আমার দয়া সবকিছু পরিব্যাপ্ত করেছে।” (সূরা আল-আ’রাফ ৭:১৫৬)


“রহমান” — আল্লাহর সাধারণ দয়া, যা মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য।


“রহিম” — আল্লাহর বিশেষ দয়া, যা মুমিনদের জন্য আখিরাতে সংরক্ষিত।



مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ


অর্থ: “বিচার দিনের মালিক।”


তাফসীর:

“মালিক” অর্থ মালিক ও শাসক।


“ইয়াওমিদ্দিন” অর্থ বিচার দিবস—যেদিন মানুষ তার কাজের হিসাব দেবে।


এই আয়াত মনে করিয়ে দেয় যে, সবকিছুর শেষ বিচার আল্লাহর হাতে।


এটি আল্লাহভীতির শিক্ষা দেয়, যাতে মানুষ অন্যায় না করে।



إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ


অর্থ: “আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই।”


 তাফসীর:

এখানে “ইয়া কাঃ” (শুধু তোমার) কথাটির পুনরাবৃত্তি দ্বারা জোর দেওয়া হয়েছে।


ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্যই হতে হবে — কোনো নবী, পীর, কবরে নয়।


“নাস্তাঈন” অর্থ সাহায্য প্রার্থনা — আল্লাহর উপর নির্ভর করার শিক্ষা।


এ আয়াত তাওহীদুল উলুহিয়্যা (ইবাদতে একত্ব) ও তাওহীদুল রুবুবিয়্যা (প্রভুত্বে একত্ব) — দুইয়ের সংক্ষিপ্ত প্রকাশ।


এটি দোয়ার ভাষায় বলা, তাই প্রতিদিন নামাজে এই প্রতিশ্রুতি নবায়ন হয়।



 اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ


অর্থ: “আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো।”


তাফসীর:

মানুষ ভুল করে, তাই আল্লাহর কাছে সঠিক পথের দোয়া করা বাধ্যতামূলক।


“সিরাতাল মুস্তাকিম” মানে এমন পথ, যা সত্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিত্রাণের পথ।


এটি ইসলামের পথ — কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন।



صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ


অর্থ: “সেই লোকদের পথ, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।”


তাফসীর:

আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন:

নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎকর্মশীল লোকেরা।

(সূরা আন-নিসা ৪:৬৯)

তাদের পথই শান্তি, সঠিক বিশ্বাস ও পরকালের মুক্তির পথ।



 غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ


অর্থ: “যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে তাদের নয়, এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তাদেরও নয়।”


 তাফসীর:

“মাগদুব আলাইহিম” — যারা জেনে শুনে সত্যের বিরোধিতা করেছে (যেমন: ইহুদিরা)।


“দল্লীন” — যারা অজ্ঞতা ও ভ্রান্তিতে পথ হারিয়েছে (যেমন: খ্রিস্টানরা)।


দোয়াটি শেখায় — আমরা যেন না গজবপ্রাপ্তদের মতো হই, না পথভ্রষ্টদের মতো।


ইসলামের পথ মধ্যপন্থী — অতিরিক্ততা ও অবহেলার মাঝামাঝি।




 সমগ্র তাফসীরের সারসংক্ষেপ:

সূরা আল-ফাতিহা হলো এক মহান দোয়া ও চুক্তি—

🔹 এতে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়েছে।

🔹 বান্দা ও আল্লাহর সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

🔹 বান্দা নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে সঠিক পথের দোয়া করে।

🔹 এই সূরায় ইসলামের মূল তিনটি বিষয় বিদ্যমান:

আকিদাহ (বিশ্বাস) – আল্লাহর একত্ব, দয়া, বিচার।


ইবাদত (উপাসনা) – শুধু আল্লাহর জন্য।


আখলাক (চরিত্র) – সোজা পথ অবলম্বন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটি শহিদ ওয়ার্ল্ড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url